ভ্রমণে যাই, কিন্তু কেন? (Why We Travel)

পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টির সময় থেকেই, মানুষ কিন্তু এক জায়গায় থাকে নি, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়া, বসবাস করা, অন্য দেশ বা সংস্কৃতিকে জানা – সবই ছিল সেই আদিম মানুষের মজ্জাগত, আর মানুষের সেই আদিম প্রবণতায় ইন্ধন যোগায় আজকের যোগাযোগ ব্যবস্থা, বর্তমানে মানুষ আরও বেশী ভ্রমণ করে – মনে হয়, মানুষ অনেকটা যাযাবর গোত্রের প্রাণী। আবার, কোন কোন মানুষ, এক জায়গায় খুব বেশিদিন থাকলেই এক টুকরো মুক্তির আকাশ খোঁজে।

তাছাড়া, আধুনিক সমাজ বিজ্ঞানীরা বলছে, মানুষ যতই এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাবে, ঘুরবে, অন্য দেশ, জাতির সংস্কৃতি ঐতিহ্যকে জানবে, সম্মান করবে, ততই মানুষের মনের প্রসারতা বাড়বে, পৃথিবীতে শান্তি আসবে। গবেষণা প্রমান করেছে – দৈনন্দিন জীবনের একঘেঁয়েমি মানুষের চিন্তাকে ভোঁতা করে দেয়। আর সেই একঘেঁয়েমির হাত থেকে বাঁচায় ভ্রমণ।

সেই ছেলেবেলা থেকেই শুনে এসেছি – ভ্রমণ শিক্ষারই এক অঙ্গ। সত্যিই ভ্রমণ মানুষকে অনেক কিছু শেখায়। এই বিশাল পৃথিবীতে নিজের অস্তিত্বের পরিচয় দেয় ভ্রমণ, যে কোন অচেনা, অজানা পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে শেখায় ভ্রমণ। পৃথিবীর নানা কোণের নানান ধরণের মানুষ, তাদের জীবন যাপন, ইতিহাস, ঐতিহ্য, ভাষা – সব কিছুর সঙ্গে পরিচয় করায় ভ্রমণ। ভ্রমণ মানুষকে সহিষ্ণু হতে শেখায়। ভ্রমণ যে শুধু অন্যকে জানা তা নয়, ভ্রমণ বহু ক্ষেত্রে নিজেকেই জানা, নিজেকেই চেনা।

তাই, যখনই সময় ও সুযোগ আসে, ভ্রমণের সেই আনন্দ হতে নিজেদের বঞ্চিত করতে চাই না, টিকিট কেটে নিয়ে অপেক্ষা করি সেই বিশেষ দিনের। মাঝরাতে উঠে ট্রেন বা ফ্লাইট ধরার, অপেক্ষা করার সমস্ত ক্লান্তি উড়ে যায়, যখন কোন এক ভিন দেশে পৌঁছে যাই, আর সেখানের অচেনা অজানা মানুষ হাসি মুখে স্বাগত জানায় – সে এক অন্য রকম অদ্ভুত ভালো লাগার অনুভূতি।

প্রকৃতির কোলে ভ্রমণের স্মৃতি বোধহয় মানুষের মস্তিষ্কে সবচেয়ে বেশী জায়গা করে নেয়, সারা জীবনের স্মৃতি হয়ে যায় – দৈনন্দিন জীবনে ফিরে এসে, শহরের পথে চলার সময়ে যখন শহরের যানবাহন একরাশ কালো ধোঁয়া উগড়ে দেয়, মনের চোখে কিন্তু তখনো নীল সমুদ্রের উদার হাতছানি ভাসে, আমালফি কোস্টের ভেজা মিষ্টি হাওয়ার কথাই মনে হয়। যতই হোক, মানুষ যে প্রকৃতিরই সন্তান।


 

Breaking News